কবিতা ৩৯ – ভেজাল / Poem 39 – Bhejal (Adulterated)

এ সাইটে সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখা তোলা হয়না অনেকদিন থেকেই, তাই আজ সেই বিরতিতে একটি ছেদ – ভেজাল  কবিতাটি বর্তমান বাঙ্গালী সমাজের এমনই নিখুঁত একটি প্রতিচ্ছবি যে সুকান্ত কবিতাটি আজ হতে সত্তর বছর আগে লিখেছিলেন তা কল্পনা করতেও অদ্ভূত লাগে। কবিতাটির প্রাসঙ্গিকতা সুকান্তের দূরদর্শীতাস্বরূপ, নাকি এই সত্তর বছরেও বাঙ্গালী সমাজের অসততা, দুর্নীতি আর নকলপ্রবণতা থেকে উঠে আসতে না পারার কারণে, তা জানিনা। তবে এটুকু জানি যে নিজের চারপাশটাকে যখন চেয়ে দেখি তখন এই কবিতাটি বড় সত্যি হয়ে ঠেকে। শুধু চারপাশ কেন, নিজেকে দেখলেও তো তাই। সেজন্যে আজকের দিনে দুটিকেই ব্যঙ্গ করে সুকান্তের এই কবিতাটি আজ তুলে দিলাম।

It has been a long time since I last put up a work by Sukanta Bhattacharya on this site, hence this post. Bhejal (Adulterated) is a poem that perfectly describes the dysfunction within the Bangalee society, and upon introspection, around perhaps all of us. Written about seventy years ago, the poem continues to be a condescending nod from Sukanta, and perhaps just as well – we really have not risen above corruption, dishonesty and shortchanging since he penned those words.

ভেজাল

ভেজাল, ভেজাল ভেজাল রে ভাই, ভেজাল সারা দেশটায়,
ভেজাল ছাড়া খাঁটি জিনিষ মিলবে নাকো চেষ্টায়!
ভেজাল তেল আর ভেজাল চাল, ভেজাল ঘি আর ময়দা,
`কৌন ছোড়ে গা ভেজাল ভেইয়া, ভেজালসে হ্যায় ফয়দা।’
ভেজাল পোশাক ভেজাল খাবার, ভেজাল লোকের ভাবনা,
ভেজালেরই রাজত্ব এ পাটনা থেকে পাবনা।
ভেজাল কথা— বাংলাতে ইংরেজী ভেজাল চলছে,
ভেজাল দেওয়া সত্যি কথা লোকেরা আজ বলছে।
`খাঁটি জিনিষ’ এই কথাটা রেখো না আর চিত্তে,
`ভেজাল’ নামটা খাঁটি কেবল আর সকলই মিথ্যে।
কলিতে ভাই `ভেজাল’ সত্য ভেজাল ছাড়া গতি নেই,
ছড়াটাতেও ভেজাল দিলাম, ভেজাল দিলে ক্ষতি নেই॥

– সুকান্ত ভট্টাচার্য

ছোটগল্প ১০১ – প্রফেসর শঙ্কু – প্রফেসর শঙ্কু ও হাড় / Short Story 91 – Professor Shanku – Professor Shanku O Har (Bones)

Satyajit Ray-Professor Shanku O Harপিডিএফ লিঙ্ক / PDF Link: Satyajit Ray-Professor Shanku O Har

প্রফেসর শঙ্কুর গল্প – প্রফেসর শঙ্কু ও হাড় – সত্যজিৎ রায়

প্রফেসর শঙ্কু ও হাড় সত্যজিতের লেখা শঙ্কুর প্রথম গল্পগুলোর একটি। আর সেসব গল্পগুলোর মত এটিতেও আমরা শঙ্কুকে ধী-স্থির ঋষিতুল্য বিজ্ঞানীর বদলে বেপরোয়া একজন হিসেবেই দেখতে পাই। তবে এই গল্পটা সেদিকটা বাদেও প্রফেসরের অন্য গল্পগুলোর চাইতে একটু আলাদা, কারণ এতে শঙ্কু বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসার বশে যা করেন, তা তাকে আমাদের চিরচেনা নীতিবান এক মানুষের বদলে একজন আত্মসাৎকারীর পর্যায়েই ফেলে দেয়।

Professor Shanku’s Stories – Professor Shanku O Har (Bones) – Satyajit Ray

Professor Shanku O Har is one of the first stories of the scientist written by Satyajit Ray, and like others of its kind, it depicts Shanku as more of a reckless scientist than the almost sage-like person we come across his later depictions. This story is different, however, for another reason: in it, Shanku’s recklessness and curiosity leads him to appropriate someone else’s property – an act that results in severe consequences.

গান ৩৮ – এ-কূল ভাঙে ও-কূল গড়ে / Song 38 – Ekul Bhange Okul Gare (The River of Fate)

Kazi Nazrul Islam-Nodi E-Kul Bhange (2)

অনেকদিন পর নজরুল, তবে এই লেখাটি বিদ্রোহ নয়, বরং বিশাল এই জগতে মানুষের অসহায়ত্ব আর ক্ষুদ্রতা নিয়ে। গানটার প্রথম লাইন ক’টি জানতাম অনেকদিন ধরেই, কিন্তু এটি যে নজরুলের বহুমুখী প্রতিভার একটি উদাহারণ, আজ তা জানতে পেরে আমার শ্রদ্ধান্বিত বিস্ময়টুকু পাঠকদের সাথে ভাগ করে নিলাম।

After a long time, a poem by Nazrul, and one of his poignant ones at that. Unlike his more celebrated poems that inspire rebellion, E-kul Bhange O-Kul Gare (The River of Fate) depicts the our weakness and insignificance in the grand scheme of things, and is a wonderful testament to Nazrul’s multifaceted talent as a poet.

এ-কূল ভাঙে ও-কূল গড়ে এই তো নদীর খেলা

এ-কূল ভাঙে ও-কূল গড়ে এই তো নদীর খেলা।
সকাল বেলা আমির, রে ভাই (ও ভাই) ফকির, সন্ধ্যাবেলা॥
সেই নদীর ধারে কোন্ ভরসায়
বাঁধলি বাসা, ওরে বেভুল, বাঁধলি বাসা, কিসের আশায়?
যখন ধরলো ভাঙন পেলি নে তুই পারে যাবার ভেলা।
এই তো বিধির খেলা রে ভাই এই তো বিধির খেলা॥
এই দেহ ভেঙে হয় রে মাটি, মাটিতে হয় দেহ
যে কুমোর গড়ে সেই দেহ, তার খোঁজ নিল না কেহ (রে ভাই)।
রাতে রাজা সাজে নাচমহলে
দিনে ভিক্ষা মেগে বটের তলে
শেষে শ্মশান ঘাটে গিয়ে দেখে সবাই মাটির ঢেলা
এই তো বিধির খেলা রে ভাই ভব নদীর খেলা॥

– কাজী নজরুল ইসলাম