গল্প ১২৬ – মহেশ / Story 126 – Mahesh


পিডিএফ লিঙ্ক / PDF Link
: Sharat Chandra Chattopadhyay-Mahesh

মহেশ – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

আজ ভারতের বর্তমান প্রেক্ষাপটকে মাথায় রেখে একটি গল্প। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মহেশ শুধুমাত্র সেটির বিষয়বস্তুর কারণেই বাংলা সাহিত্যে অনন্য একটি গল্প বলে বিবেচিত হওয়ার যোগ্যতা রাখে – গল্পটির মূল চরিত্র গ্রামীণ-বাংলারই কোন কোণের এক দরিদ্র মুসলিম চাষী গফুর ও তার মেয়ে আমিনা, আর তাদের একমাত্র ষাঁড় মহেশ। গল্পের শুরুতে আমরা দেখি যে প্রবল খরার আর অনাহারের মাঝেও গফুর আর আমিনা মহেশকে দেখে রাখার চেষ্টা করে, কিন্তু গ্রামে অবস্থাপন্ন গোভক্ত যারা, তাদের কাছে মহেশ অনাদর আর নিষ্ঠুরতাই পায় শুধু। চরম দারিদ্র আর খাদ্যাভাবের ফলে গফুরের পরিবারটির যা করুণ পরিণতি হওয়ার কথা, শেষে তাই হয়, কিন্তু গল্পটি পড়তে পড়তে মনে প্রশ্ন জাগে, যা ঘটে, তার জন্যে কি শুধু গফুরই দায়ী?

এই সময়ে, বিশেষ করে যেখানে একের পর এক গো-সংক্রান্ত ঘটনার কারণে ভারতে তোলপাড় চলছে, সেখানে একজন চাষীর তার ষাঁড়ের প্রতি গভীর মমতা নিয়ে লেখা এJই গল্পটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। যার যার ধর্মবিশ্বাস থেকে যাতে আমরা অন্য সম্প্রদায়ের মানুষদের মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি আর সরলীকরণ না করি, সেই আশায়ই তাই আজ এই গল্পটি তুলে দেওয়া।

Mahesh – Sharat Chandra Chattopadhyay

Today, a fitting story for these times. Written by the eminent 19th Century novelist Sharat Chandra Chattopadhyay, Mahesh narrates the tale of a rural Muslim family which, perhaps contrary to what prevalent stereotypes in the subcontinent would suggest, very much cares for its emaciated and weak ox, Mahesh. To the village landlord and his pious stooges, however, Mahesh is only a hungry menace which must be contained. As the story progresses against the background of a drought, things take a cruel and tragic turn, but as you read the story, ask yourself, who is the real villain here?

One might argue that the story is a rather one-sided depiction of reality, and perhaps they are right. But even so, it is a side that exists, and one that we must consider – if anything, that is what religion teaches us.

কবিতা ৩৯ – ভেজাল / Poem 39 – Bhejal (Adulterated)

এ সাইটে সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখা তোলা হয়না অনেকদিন থেকেই, তাই আজ সেই বিরতিতে একটি ছেদ – ভেজাল  কবিতাটি বর্তমান বাঙ্গালী সমাজের এমনই নিখুঁত একটি প্রতিচ্ছবি যে সুকান্ত কবিতাটি আজ হতে সত্তর বছর আগে লিখেছিলেন তা কল্পনা করতেও অদ্ভূত লাগে। কবিতাটির প্রাসঙ্গিকতা সুকান্তের দূরদর্শীতাস্বরূপ, নাকি এই সত্তর বছরেও বাঙ্গালী সমাজের অসততা, দুর্নীতি আর নকলপ্রবণতা থেকে উঠে আসতে না পারার কারণে, তা জানিনা। তবে এটুকু জানি যে নিজের চারপাশটাকে যখন চেয়ে দেখি তখন এই কবিতাটি বড় সত্যি হয়ে ঠেকে। শুধু চারপাশ কেন, নিজেকে দেখলেও তো তাই। সেজন্যে আজকের দিনে দুটিকেই ব্যঙ্গ করে সুকান্তের এই কবিতাটি আজ তুলে দিলাম।

It has been a long time since I last put up a work by Sukanta Bhattacharya on this site, hence this post. Bhejal (Adulterated) is a poem that perfectly describes the dysfunction within the Bangalee society, and upon introspection, around perhaps all of us. Written about seventy years ago, the poem continues to be a condescending nod from Sukanta, and perhaps just as well – we really have not risen above corruption, dishonesty and shortchanging since he penned those words.

ভেজাল

ভেজাল, ভেজাল ভেজাল রে ভাই, ভেজাল সারা দেশটায়,
ভেজাল ছাড়া খাঁটি জিনিষ মিলবে নাকো চেষ্টায়!
ভেজাল তেল আর ভেজাল চাল, ভেজাল ঘি আর ময়দা,
`কৌন ছোড়ে গা ভেজাল ভেইয়া, ভেজালসে হ্যায় ফয়দা।’
ভেজাল পোশাক ভেজাল খাবার, ভেজাল লোকের ভাবনা,
ভেজালেরই রাজত্ব এ পাটনা থেকে পাবনা।
ভেজাল কথা— বাংলাতে ইংরেজী ভেজাল চলছে,
ভেজাল দেওয়া সত্যি কথা লোকেরা আজ বলছে।
`খাঁটি জিনিষ’ এই কথাটা রেখো না আর চিত্তে,
`ভেজাল’ নামটা খাঁটি কেবল আর সকলই মিথ্যে।
কলিতে ভাই `ভেজাল’ সত্য ভেজাল ছাড়া গতি নেই,
ছড়াটাতেও ভেজাল দিলাম, ভেজাল দিলে ক্ষতি নেই॥

– সুকান্ত ভট্টাচার্য

ছোটগল্প ৯৫ – ভয়াবহ নানা / Short Story 95 – Bhoyaboho Nana (Granddad the Terrible)

পিডিএফ লিঙ্ক / PDF Link: Jafar Iqbal-Amra O Crab Nebula-Bhoyaboho Nana

ভয়াবহ নানা – জাফর ইকবাল (আমড়া ও ক্র্যাব নেবুলা হতে সংগ্রহিত)

অনেকদিন এই সাইটে কোন লেখা তোলা হয়না। তাই আজ তাতে ছেদ টানা। জাফর ইকবালের ভয়াবহ নানা  শিক্ষিত-শহুরে দুই ভাইবোনের সাথে তাদের প্রাচীনপন্থী নানার মুখোমুখি হওয়া নিয়ে একটি মজার গল্প। তবে গল্পটি তোলার কারণ এটি হাসির বলে নয় – হালকা হলেও ভয়াবহ নানা  আজকের সময়ে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ মতাদর্শের যেই সংঘর্ষটুকু গল্পটিতে আমরা দেখতে পাই, বৃহত্তর বাঙ্গালী সমাজে আজ সেটিই বড় ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। পাঠকরা কোন মত মেনে চলেন তা জানিনা, কিন্তু সমালোচনা অবধারিত জেনেই এটি তুলে দেওয়া।

Bhoyaboho Nana (Granddad the Terrible) – Zafar Iqbal (from Amra O Crab Nebula)

In the way of punctuating what has been a long silence so far, this post. Jafar Iqbal’s Bhoyaboho Nana (Granddad the Terrible) is an amusing story of two city-kids taking on their rather conservative and archaic grandfather. In a time when the larger Bangalee society is going through an often-violent tussle between conflicting ideals, the story bears special significance, hence the upload.

গান ৩০ – একতারা বাজাইয়ো না / Song 30 – Ektara Bajaiyo Na (Don’t Play the Ektara)

এইবারের পোস্টটি সাহিত্য হিসেবে খুব উঁচুমানের নয়, সুরের দিক দিয়েও যে সর্বোৎকৃষ্ট, তাও নয়, কিন্তু তবুও একতারা বাজাইয়ো না  নামের অসাধারণ এই গানটি বাঙ্গালীদের মধ্যে অনেকেরই আজ জানা। কুমার বিশ্বজিতের লেখা এই গানটিতে শ্রোতারা অনেক অর্থই খুঁজে পেতে পারেন, তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি এই গানটির হাল্কা হাস্যরসের মধ্যে আধুনিক বাঙ্গালীদের চাল-চলনের প্রচ্ছন্ন সমালোচনা শুনতে পাই। নববর্ষের প্রথম দিনটিতেএসো হে বৈশাখ  শোনা যদি বাঙ্গালীদের রেওয়াজ হয়ে থাকে, তাহলে বছরের অন্য দিনগুলিতে তারা খুব সম্ভবত একতারা বাজাইয়ো না  গানটির বাক্যগুলোই অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন। তাই আজ তাদের নিয়ে খানিকটা মজা, আর খানিকটা ব্যঙ্গ করে ভিডিও সহ গানের কলিগুলো তুলে দিলাম।

This time, a musical post. The lyrics of Ektara Bajaiyo Na (Don’t Play the Ektara) do not belong to high literature, and neither does the music rank high among compositions, yet the song remains one that many a Bangalee has heard, thanks to its catchy tune and friendly tone. Listeners of the song ascribe various meanings to it, but to me, it is a masked criticism of Bangalees who, in their eagerness to adopt the dumbed-down aspects of Western culture, have lost much of what is indigenous to them. The song, and the accompanying video, is in acknowledgment of that perceived undertone.

একতারা বাজাইও না

তোমরা একতারা বাজাইও না, দোতারা বাজাইয়ো না,
একতারা বাজাইও না, ঢাকঢোল বাজাইয়ো না,
গিটার আর বংগো বাজাও রে,
ও তোমরা গিটার আর বংগো বাজাও রে,
একতারা বাজাইলে মনে পইড়া যায়
আমার একতারা বাজাইলে মনে পইড়া যায়
একদিন বাঙালি ছিলাম রে
একদিন বাঙালি ছিলাম রে

আলতা পড়িও না, তোমরা শাড়ি পড়িও না
আলতা পড়িও না শাড়িও না
প্যান্ট আর ম্যাক্সি পড় রে
তোমরা প্যান্ট আর ম্যাক্সি পড় রে
আলতা শাড়ি পড়িলে মনে পইড়া যায়
আমার আলতা শাড়ি পড়িলে মনে পইড়া যায়
একদিন বাঙালি ছিলাম রে
একদিন বাঙালি ছিলাম রে

শুক্তো রাঁধিয়ো না পায়েস রাঁধিয়ো না
শুক্তো রাঁধিয়ো না পায়েস রাঁধিয়ো না
মোগলাই আর চাইনিজ রাঁধো রে
ও তোমরা চাইনিজ আর মোগলাই রাঁধো রে
শুক্তো পায়েস রাঁধিলে মনে পইড়া যায়
আমার শুক্তো পায়েস রাঁধিলে মনে পইড়া যায়
একদিন বাঙালি ছিলাম রে
একদিন বাঙালি ছিলাম রে

জারি গাইয়ো না, বাউল গাইয়ো না
তোমরা কির্ত্তন গাইয়ো না, বাউল গাইয়ো না
ডিসকো আর রক গাও রে
তোমরা ডিসকো আর রক গাও রে
কির্ত্তন বাউল গাইলে মনে পইড়া যায়
একদিন বাঙালি ছিলাম রে
একদিন বাঙালি ছিলাম রে

একদিন বাঙালি ছিলাম রে
একদিন বাঙালি ছিলাম রে
একদিন বাঙালি ছিলাম রে

– কুমার বিশ্বজিৎ

কবিতা ২৫ – দুই বিঘা জমি / Poem 25 – Dui Bigha Jomi (Two Bighas of Land)

Rabindranath Thakur-Dui Bigha Jomi

বাংলার গ্রামীণ সমাজের শ্রেণীবিভেদ আর দুর্বলের উপর সবলের অনাচার-অবিচার নিয়ে লেখা রবিঠাকুরের অমর কবিতাদুই বিঘা জমি। বাংলা সাহিত্যের সবচাইতে বিখ্যাত পদ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম এই কবিতাটির পটভূমি আমাদের চেনা গঙ্গা/পদ্মা পারেরই কোন গ্রাম, আর মূল চরিত্র ভূমিহীন উদ্বাস্তু একজন কৃষক, যে তার হারানো জমিকে একবার দেখার আশায় নিজ গ্রামে ফিরে আসে। দুই বিঘা জমি  বাংলার কৃষকের চিরন্তন দুঃখের একটি কবিতা, আর সেকারণেই বাঙ্গালীর মানসে কবিতাটির স্থান বিশেষ উচ্চতায়।

Dui Bigha Jomi (Two Bighas of Land) is perhaps one of the most famous poems in Bangla literature. Written from the perspective of a farmer who was displaced from his land by a landlord, the poem depicts the centuries-old cycle of oppression by the powerful on the farmers of not only rural Bengal, but perhaps in societies across the the world. Dui Bigha Jomi is the tale of a man who has lost it all, and so descriptive of rural Bengal that it is a must-read for every Bangalee.

দুই বিঘা জমি

শুধু বিঘে দুই ছিল মোর ভুঁই   আর সবই গেছে ঋণে।
বাবু বলিলেন, “বুঝেছ উপেন,   এ জমি লইব কিনে।’
কহিলাম আমি, “তুমি ভূস্বামী,   ভূমির অন্ত নাই।
চেয়ে দেখো মোর আছে বড়ো-জোর   মরিবার মতো ঠাঁই।’
শুনি রাজা কহে, “বাপু, জানো তো হে, করেছি বাগানখান
পেলে দুই বিঘে প্রস্থে ও দিঘে   সমান হইবে টানা–
ওটা দিতে হবে।’ কহিলাম তবে   বক্ষে জুড়িয়া পাণি
সজল চক্ষে, “করুণ বক্ষে   গরিবের ভিটেখানি।
সপ্ত পুরুষ যেথায় মানুষ   সে মাটি সোনার বাড়া,
দৈন্যের দায়ে বেচিব সে মায়ে   এমনি লক্ষ্মীছাড়া!’
আঁখি করি লাল রাজা ক্ষণকাল   রহিল মৌনভাবে,
কহিলেন শেষে ক্রূর হাসি হেসে,  “আচ্ছা, সে দেখা যাবে।’

পরে মাস দেড়ে ভিটে মাটি ছেড়ে   বাহির হইনু পথে–
করিল ডিক্রি, সকলই বিক্রি   মিথ্যা দেনার খতে।
এ জগতে, হায়, সেই বেশি চায়   আছে যার ভূরি ভূরি–
রাজার হস্ত করে সমস্ত   কাঙালের ধন চুরি।
মনে ভাবিলাম মোরে ভগবান   রাখিবে না মোহগর্তে,
তাই লিখি দিল বিশ্বনিখিল   দু বিঘার পরিবর্তে।
সন্ন্যাসীবেশে ফিরি দেশে দেশে   হইয়া সাধুর শিষ্য
কত হেরিলাম মনোহর ধাম, কত মনোরম দৃশ্য!
ভূধরে সাগরে বিজনে নগরে   যখন যেখানে ভ্রমি
তবু নিশিদিনে ভুলিতে পারি নে   সেই দুই বিঘা জমি।
হাটে মাঠে বাটে এই মতো কাটে   বছর পনেরো-ষোলো–
একদিন শেষে ফিরিবারে দেশে   বড়ই বাসনা হল।

নমোনমো নম সুন্দরী মম   জননী বঙ্গভূমি!
গঙ্গার তীর স্নিগ্ধ সমীর,   জীবন জুড়ালে তুমি।
অবারিত মাঠ, গগনললাট  চুমে তব পদধূলি,
ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড়   ছোটো ছোটো গ্রামগুলি।
পল্লবঘন আম্রকানন   রাখালের খেলাগেহ,
স্তব্ধ অতল দিঘি কালোজল–  নিশীথশীতল স্নেহ।
বুকভরা মধু বঙ্গের বধূ   জল লয়ে যায় ঘরে–
মা বলিতে প্রাণ করে আনচান,   চোখে আসে জল ভরে।
দুই দিন পরে দ্বিতীয় প্রহরে   প্রবেশিনু নিজগ্রামে–
কুমোরের বাড়ি দক্ষিণে ছাড়ি   রথতলা করি বামে,
রাখি হাটখোলা, নন্দীর গোলা, মন্দির করি পাছে
তৃষাতুর শেষে পঁহুছিনু এসে   আমার বাড়ির কাছে।

ধিক্‌ ধিক্‌ ওরে, শতধিক্‌ তোরে,   নিলাজ কুলটা ভূমি!
যখনি যাহার তখনি তাহার,   এই কি জননী তুমি!
সে কি মনে হবে একদিন যবে   ছিলে দরিদ্রমাতা
আঁচল ভরিয়া রাখিতে ধরিয়া   ফল ফুল শাক পাতা!
আজ কোন্‌ রীতে কারে ভুলাইতে   ধরেছ বিলাসবেশ–
পাঁচরঙা পাতা অঞ্চলে গাঁথা, পুষ্পে খচিত কেশ!
আমি তোর লাগি ফিরেছি বিবাগি   গৃহহারা সুখহীন–
তুই হেথা বসি ওরে রাক্ষসী,   হাসিয়া কাটাস দিন!
ধনীর আদরে গরব না ধরে !   এতই হয়েছ ভিন্ন
কোনোখানে লেশ নাহি অবশেষ   সেদিনের কোনো চিহ্ন!
কল্যাণময়ী ছিলে তুমি অয়ি,   ক্ষুধাহরা সুধারাশি!
যত হাসো আজ যত করো সাজ   ছিলে দেবী, হলে দাসী।

বিদীর্ণ হিয়া ফিরিয়া ফিরিয়া   চারি দিকে চেয়ে দেখি–
প্রাচীরের কাছে এখনো যে আছে,   সেই আমগাছ একি!
বসি তার তলে নয়নের জলে   শান্ত হইল ব্যথা,
একে একে মনে উদিল স্মরণে   বালক-কালের কথা।
সেই মনে পড়ে জ্যৈষ্ঠের ঝড়ে  রাত্রে নাহিকো ঘুম,
অতি ভোরে উঠি তাড়াতাড়ি ছুটি   আম কুড়াবার ধুম।
সেই সুমধুর স্তব্ধ দুপুর,   পাঠশালা-পলায়ন–
ভাবিলাম হায় আর কি কোথায়   ফিরে পাব সে জীবন!
সহসা বাতাস ফেলি গেল শ্বাস   শাখা দুলাইয়া গাছে,
দুটি পাকা ফল লভিল ভূতল   আমার কোলের কাছে।
ভাবিলাম মনে বুঝি এতখনে   আমারে চিনিল মাতা,
স্নেহের সে দানে বহু সম্মানে   বারেক ঠেকানু মাথা।

হেনকালে হায় যমদূত-প্রায়  কোথা হতে এল মালী,
ঝুঁটি-বাঁধা উড়ে সপ্তম সুরে   পাড়িতে লাগিল গালি।
কহিলাম তবে, “আমি তো নীরবে   দিয়েছি আমার সব–
দুটি ফল তার করি অধিকার,   এত তারি কলরব!’
চিনিল না মোরে, নিয়ে গেল ধরে  কাঁধে তুলি লাঠিগাছ–
বাবু ছিপ হাতে পারিষদ-সাথে   ধরিতেছিলেন মাছ।
শুনি বিবরণ ক্রোধে তিনি কন,   “মারিয়া করিব খুন!’
বাবু যত বলে পারিষদ-দলে   বলে তার শতগুণ।
আমি কহিলাম, “শুধু দুটি আম  ভিখ মাগি মহাশয়!’
বাবু কহে হেসে, “বেটা সাধুবেশে   পাকা চোর অতিশয়।’
আমি শুনে হাসি আঁখিজলে ভাসি,   এই ছিল মোর ঘটে–
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ,   আমি আজ চোর বটে!

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (কাহিনী  হতে সংগ্রহীত)

ছোটগল্প ৮০ – নিমগাছ / Short Story 80 – Neemgachh (The Neem Tree)

Banaful-Neem Gachh 2

পিডিএফ লিঙ্ক / PDF Link: Banaful-Neem Gachh

নিমগাছ – বনফুল

এবার বাংলার চিরঅবহেলিত নারীদের নিয়ে লেখা একটি গল্প, বনফুলের কলমে। গল্পটি পিডিএফের সাথে সাথে এই পৃষ্ঠাতেও তুলে দিলাম।

Neemgachh (The Neem Tree) – Banaful

This time, a metaphorical representation of the neglected women of Bengal, by Banaful.

কেউ ছালটা ছাড়িয়ে নিয়ে সিদ্ধ করছে।
পাতাগুলো ছিঁড়ে শিলে পিষছে কেউ।
কেউ বা ভাজছে গরম তেলে।
খোস দাদ হাজা চুলকুনিতে লাগাবে।
চর্মরোগের অব্যর্থ মহৌষধ।
কচি পাতাগুলো খায়ও অনেকে।
এমনি কাঁচাই…..

কিংবা ভেজে বেগুন- সহযোগে।
যকৃতের পক্ষে ভারী উপকার।
কচি ডালগুলো ভেঙে চিবোয় কত লোক…। দাঁত ভালো থাকে।
কবিরাজরা প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
বাড়ির পাশে গজালে বিজ্ঞরা খুসী হন।
বলেন-”নিমের হওয়া ভাল, থাক, কেটো না।”
কাটে না, কিন্তু যত্নও করে না।
আবর্জনা জমে এসে চারিদিকে।
শান দিয়ে বাধিয়েও দেয় কেউ- সে আর এক আবর্জনা।
হঠাৎ একদিন একটা নূতন ধরণের লোক এল।
মুগ্ধ দৃষ্টিতে বেয়ে রইল নিমগাছের দিকে। ছাল তুললে না, পাতা ছিঁড়লে না, ডাল ভাঙ্গলে না। মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল শুধু।
বলে উঠলো, “বাঃ কি সুন্দর পাতাগুলো…..কি রূপ। থোকা থোকা ফুলেরই বা কি বাহার….এক ঝাঁক নক্ষত্র নেমে এসেছে যেন নীল আকাশ থেকে সবুজ সায়রে। বাঃ–”
খানিকক্ষণ চেয়ে থেকে চলে গেল।`
কবিরাজ নয়, কবি।
নিমগাছটার ইচ্ছে করতে লাগল লোকটার সঙ্গে চলে যায়। কিন্তু পারলে না।মাটির ভেতর শিকড় অনেক দূরে চলে গেছে। বাড়ির পিছনে আবর্জনার স্তূপের মধ্যেই দাঁড়িয়ে রইল সে।
ওদের বাড়ীর গৃহকর্ম-নিপুণা লক্ষ্ণী বউটার ঠিক এই দশা।

ছোটগল্প ৭৩ – বর্ণে বর্ণে / Short Story 73 – Barne Barne (The Choice of Color)

পিডিএফ লিঙ্ক / PDF Link: Banaful-Barne Barne

বর্ণে বর্ণে – বনফুল

বাঙ্গালী সমাজের নির্মম অবিচারের একটি গল্প – দুটি আলাদা দৃশ্যে বাঙ্গালী ভদ্রলোকদের রঙের বিচারের মাধ্যমে – গল্পটি বনফুল লিখেছিলেন অনেক আগে, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই যে গল্পটির চরিত্রগুলো আজও আমাদের সমাজে বর্তমান।

Barne Barne (The Choice of Color) – Banaful

In this story, Banaful portrays a cancer of Bangalee society, through narrations of two situations where Bangalee gentlemen base their choice on colour.

ছোটগল্প ৫৭ – ছুড়িটা / Short Story 57 – Chhurita (The Girl)

পিডিএফ লিঙ্ক / PDF Link: Banaful-Chhurita

ছুড়িটা – বনফুল

“মনে হয় তার নাম যে অপ্সরী ছিল একথা কি কেউ বিশ্বাস করবে আজকাল? স্কুলে কিন্তু তার ওই নামই লেখা আছে এখনও। সে স্কুলে ভাল মেয়ে ছিল, ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়েছিল। তারপর হঠাৎ একদিন হেডমিস্ট্রেস তার নামটা কেটে দিলেন। বললেন, তুমি বাড়ি যাও, এ স্কুলে তোমাকে পড়তে হবে না। সে বাড়ি চলে গেল, মাকে জিজ্ঞাসা করল, কেন তাকে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দিল। মা উত্তর দিল না। খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললে – কি হবে স্কুলে পড়ে, তোমার পড়ার খরচ আমি টানতে পারব না। আর পড়েই বা হবে কি? শেষকালে গতর বেচেই তো খেতে হবে।

… তার বাবার কথা মনে পড়ে তখন। তার বাবা একদিন দিল্লী চলে গেল। বলে গেল সেখানে নাকি একটা ভাল কাজ পেয়েছে। দিন কতক পরে ফিরে এসে সবাইকে নিয়ে যাবে। কিন্তু বাবা আর ফেরেনি। মাকে চিঠি দিয়েছিল একটা। পঞ্চাশটা টাকাও পাঠিয়েছিল মনি-অর্ডার করে। মা সে টাকা ফেরত দিয়েছিল।”

একজন নারীর প্রতি সমাজের চরম অবিচার আর ভদ্রলোকদের কপটতার গল্প – বনফুলের কলমে।

Chhurita (The Girl) – Banaful

The story of a wronged woman in any developing society, and the hypocrisy of those who call themselves gentleman – in Banaful’s words.

ছোটগল্প ৪৬ – অতীতের রাণী / Short Story 46 – Ateeter Rani (The Beggar Who was Once A Queen)

Banaful-Ateeter Rani
(সম্পাদিত প্রতিরুপটির আদি ছবিটি এঁকেছেন মাইকেল ক্লুকনার / Image above is an edited version of the original sketched by Michael Kluckner)

পিডিএফ লিঙ্ক / PDF Link:  Banaful-Ateeter Rani

অতীতের রাণী – বনফুল

একজন ক্ষুধায় কাতর বৃদ্ধা ভিখিরিণীর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা ক্ষয়িষ্ণু বাঙ্গালী সমাজের দীনতা – বনফুলের কলমে।

Ateeter Rani (The Beggar Who was Once a Queen) – Banaful

Banaful narrates the decline of Bangalee Society – as seen through the eyes of an old, starving beggar.

কবিতা ৮ – অদ্ভুত আঁধার এক / Poem 8 – Adbhut Andhar Ek (A Strange Darkness)

জীবনানন্দ দাশ এর আরেকটি কবিতা – আমাদের সমাজের ক্রমবর্ধমান অবক্ষয় নিয়ে।

Another poem by Jibanananda Das – Adbhut Andhar Ek (A Strange Darkness) laments how the cruel and the heartless have come to assume power, while the compassionate and the virtuous face prosecution.

অদ্ভুত আঁধার এক

অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ,
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা;
যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই – প্রীতি নেই – করুণার আলোড়ন নেই
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।
যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি
এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক ব’লে মনে হয়
মহত্‍‌ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা
শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়।

– জীবনানন্দ দাশ

Adbhit Andhar Ek / A Strange Darkness – Translation by Clinton B. Seely

A strange darkness has come upon the world today.
They who are most blind now see,
Those whose hearts lack love, lack warmth, lack pity’s stirrings,
Without their fine advice, the world today dare not make a move.
They who yet possess an abiding faith in man,
To whom still now high truths or age-old customs,
Or industry or austere effort all seem natural,
Their hearts are victuals for the vulture and the jackal.

– Jibanananda Das

ছোটগল্প ২০ – শরশয্যা / Short Story 20 – Sharo Shojya (Bed of Thorns)

Sharo Shojya

পিডিএফ লিঙ্ক / PDF Link: Banaful-Sharo Shojya

শরশয্যা – বনফুল

আমাদের দেশের পাড়ার মোড়ে মোড়ে চায়ের কাপে ঝড় তোলা সুশিক্ষিত আধুনিক তরুণগণ নারী ধর্ষণ কেন ঠেকাতে পারেননা, তার গল্প। বনফুল এই গল্পটি লিখেছিলেন অনেক আগে, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে গল্পটির প্রাসঙ্গিকতার কারণটুকু আমরা আজও দূর করতে পারিনি।

Sharo Shojya (Bed of thorns) – Banaful

A story of why the modern, conscious Bangalee youth of today fail to stand up against rape. Banaful wrote this long ago, but sadly, it still remains relevant today.

ছোটগল্প ১২ – পিকুর ডায়রি / Short Story 12 – Pikoor Diary (Pikoo’s Diary)

Pikoor Diary

পিডিএফ লিঙ্ক / PDF Link: Satyajit Ray-Pikoor Diary

পিকুর ডায়রি – সত্যজিৎ রায়

একটি শিশুর চোখ দিয়ে দেখা উচ্চবিত্ত বাঙ্গালী সমাজের ভিতরকার ক্ষয় ও হাহাকারের একটি অসাধারণ প্রতিচ্ছবি। কৌতুহল জাগে, পশ্চিমা আদলে গড়া যেই জীবনকে আমাদের অনেকেই কাঙ্খিত বলে মনে করি, সেই জীবনের অন্তঃসারশুন্যতা কি সত্যজিৎ রায় ব্যক্তিগত জীবনে উপলব্ধি করেছিলেন?

Pikoo’s Diary – Satyajit Ray

The emptiness in the lives of the westernised Bangalee elite, seen through the eyes of a young boy. Was Ray’s story inspired by what he witnessed within the people around him?